নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ০৭ নভেম্বর, ২০১৮
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ধারাবাহিক সংলাপ শেষ হলো। ১ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই সংলাপ চলল আজ ৭ নভেম্বর পর্যন্ত। এই সংলাপে বিএনপি নিয়ন্ত্রিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট দুবার বসেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে। বিকল্পধারা যুক্তফ্রন্ট একবার, বাম জোট একবার, ইসলামি ফ্রন্ট একবার করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এছাড়াও ১৪ দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক করেছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠতেই পারে সংলাপের অর্জন কী? কী পেলো বাংলাদেশ? কারা লাভবান হলো?
এই সংলাপে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সংলাপের মাধ্যমে তিনি নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় তুলতে সক্ষম হয়েছেন। এই সংলাপের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করতে পেরেছেন যে, রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় তিনি বাংলাদেশে অবিসংবাদিত নেতা। এই সংলাপের মাধ্যমে সকল রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের নেতা হিসেবে শেখ হাসিনাকে মেনে নিলেন। সংলাপের পর সব রাজনৈতিক দলের নেতারাই শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা, ধৈর্য্য এবং প্রাজ্ঞতায় মুগ্ধতার কথা বলেছেন। এই সংলাপ শেখ হাসিনাকে জাতির অভিভাবকের মর্যাদা দিয়েছে। বিকল্পধারার সভাপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, ‘আমি শেখ হাসিনার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি দেখেছি।’ সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে প্রথমবার এসেছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘তিনি সংলাপে আমাদের সামনে এসেছিলেন প্রস্তুতি নিয়ে। সত্যি বলতে কি আমাদের ঐ প্রস্তুতি ছিল না।’ ঐক্যফ্রন্টের অন্য নেতা আ. স. ম. আবদুর রব বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার ধৈর্য দেখে আমি অবাক হয়েছি। আমি ৯৬-২০০১ সালে তাঁর সঙ্গে কাজ করেছি। সে সময়ের তুলনায় এখন তিনি অনেক পরিণত।’ শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বাম মোর্চার নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমও বলেন, ‘তিনি সত্যি সত্যি জনগণের অভিভাবক হিসেবে কথা বলেছেন।’ এই সংলাপে দ্বিতীয় লাভবান হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতাদের আচার আচরণ কথা বার্তায় এক ধরনের ‘অহংকার’ দৃশ্যমান ছিল। এই সংলাপে আওয়ামী লীগের বহু নেতা ‘মন্ত্রী’ থেকে রাজনীতিবিদ হিসেবে দাঁড়ালেন। সবচেয়ে বড় কথা এই সংলাপ কিছুটা হলেও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে আড়াল করল।
এই সংলাপে লাভবান হয়েছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও। এই সংলাপের মধ্যে দিয়ে সদ্যজাত জোটটি প্রধান বিরোধী জোট হিসেবে আবির্ভূত হলো। এতদিন ২০ দলীয় জোটকেই প্রধান জোট হিসেবে মনে করা হতো।
এবার আসা যাক, এই সংলাপে কার ক্ষতি হলো।
এই সংলাপে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিটির নাম বেগম খালেদা জিয়া। এই সংলাপে তিনি এখন অনুকম্পায় বাঁচা, করুণ ‘রাজনীতিবিদ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেন। যার জন্য শুধু করুণা ভিক্ষাই করা হলো। তাঁকে ছাড়া সংলাপ করে বিএনপি প্রমাণ করল, বেগম জিয়া তাদের জন্য অনিবার্য নন।
সংলাপে দল হিসেবে বিএনপিও ক্ষতিগ্রস্ত হলো। এই সংলাপে বিএনপি গেছে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলের ভাড়া করা নেতা নিয়ে সংলাপ এ বছরের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক প্রহসন।
আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০ দল। যারা মূলধারার রাজনীতি থেকে কার্যত ছিটকে পড়ল।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
এর কারণ হল সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরবে মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। যদিও মোসাদ্দেক আলী ফালুর ঘনিষ্ঠরা এবং বিএনপির পক্ষ থেকে এটিকে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হিসেবে অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলেছেন যে, যেহেতু মোসাদ্দেক আলী ফালু সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এবং বিএনপির মহাসচিব সেখানে গেছেন, তারা দীর্ঘদিনের পরিচিত, ঘনিষ্ঠ- এ কারণে তার বাসায় আপ্যায়ন করা হয়েছে। এ বিষয়টির সঙ্গে কোন রাজনীতি নেই।
ফালুর ঘনিষ্ঠ একজন আত্মীয় বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন যে শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নন, বিএনপির যেকোন নেতা গেলেই ফালু তাদেরকে আপ্যায়িত করেন পুরনো সম্পর্কের জেরে। এর সঙ্গে কোন রাজনীতির সম্পর্ক নেই। মোসাদ্দেক আলী ফালু বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন এবং তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে রাজনীতি করেন না।
কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন সময় ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন, যখন বিএনপিতে অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু খালেদাপন্থী বিএনপি অংশের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে বিবেচিত হন এবং বেগম জিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণেই তাকে তারেক জিয়া কোনঠাসা করেছেন- এমন বক্তব্য বিএনপিতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। আর এরকম পরিস্থিতির কারণে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে যারা বিএনপিতে এখন কোনঠাসা তারা এখন মোসাদ্দেক আলী ফালুর উত্থান চাচ্ছে। মোসাদ্দেক আলী ফালু যেন এখন রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন সেটা তারা কামনা করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও মোসাদ্দেক আলী ফালুর এই সাক্ষাতের পর বিএনপিতে খালেদাপন্থীরা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। অনেকেই মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু যদি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতেন তাহলে বিএনপি একের পর এক এই ভুল সিদ্ধান্তগুলো করতেন না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন যে, ফালু যখন বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন তখনও তিনি বিএনপির সমালোচনা করতেন, যে কোন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তার নিজস্ব মতামত রাখতেন। এ রকম লোক বিএনপিতে দরকার আছে।
তবে কেউ কেউ মনে করছেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার এখন সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে একটা টানাপোড়েন চলছে। কারণ খালেদা জিয়ার যে সমস্ত সম্পদ তার একটি বড় অংশ মোসাদ্দেক আলী ফালুর নামে রয়েছে এবং ফালু এই সমস্ত সম্পত্তিগুলো দেখভাল করেন। কিন্তু তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পত্তিগুলোর অংশীদারিত্ব চান, মালিকানা চান। এ কারণে তারেক জিয়া গত কিছুদিন ধরে মোসাদ্দেক আলী ফালুর উপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আর এ কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টির মধ্যস্থতা করার জন্যই ফালুর সঙ্গে দেখা করেছেন কিনা তা নিয়েও কারও কারও অভিমত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, মোসাদ্দেক আলী ফালু একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং তার যে বিপুল সম্পদ তা পুরোটাই বেগম খালেদা জিয়ার। যেখান থেকে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা সিঁথি কিছু পান এবং সেই টাকা দিয়ে তিনি লন্ডনে চলেন।
এখন তারেক জিয়া এই সমস্ত সম্পদের হিসাব এবং সম্পদগুলো যেন জিয়া পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয় সেজন্য চাপ দিচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমন একজন ব্যক্তি যিনি ফালু এবং তারেক জিয়া দুজনেরই ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন। তিনি কি তাহলে ফালুর সঙ্গে তারেক জিয়ার সমঝোতা করতেই ওখানে গিয়েছিলেন? নাকি তারেকপন্থীদের কোণঠাসা করার জন্য ফালুকে রাজনীতিতে সামনে আনার নতুন করে চেষ্টা হচ্ছে।
তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিএনপি ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মূলধারার রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বিদেশে পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে বসেই বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। সরকারের সাথেও নানা রকম ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেই মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়েই হঠাৎ করে আলোচনা জমে উঠেছে। শুধু বিএনপির মধ্যে নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে মোসাদ্দেক আলী ফালুকে নিয়ে এখন আলোচনা জমজমাট।
কাগজে কলমে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছেন না। নৌকা প্রতীক ছাড়াই আওয়ামী লীগের এমপিরা যে যার মতো করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন। ১৫০ টি উপজেলায় প্রথম ধাপে ৮ মে এই নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আজ মধ্যরাত থেকেই নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা বন্ধ হচ্ছে।